সংকলনে: শাহাদাতুর রহমান সোহেল
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (হাফেজাহুল্লাহ) বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তি, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনে সুপ্রসিদ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য তার ব্যাপক তৎপরতার আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে দেওয়া দুঃসাধ্য। আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে একটি খন্ডচিত্র সমাহার এখানে দেওয়া হলো:
১) আল্লামা সাঈদী’র সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি প্রায় ৫০ বছর মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসীর পেশকারী। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য স্থানে তিনি তাফসীরুল কোরআন মাহফিল করেছেন। সেসব সিডি-ডিভিডি'র মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে । দল-মত নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর বাংলাভাষীদের মধ্যে তা ইসলামী জাগরণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সেসব থেকে কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও হয়েছে।
২) সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ কর্তৃক ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল আল্লামা সাঈদীকেও উক্ত কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। আর তিনি যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালান।
৩) আল্লামা সাঈদী ইরাক- কুয়েত যুদ্ধের মীমাংসা বৈঠক আমন্ত্রিত মেহমান।
৪) আল্লামা সাঈদী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীর আমন্ত্রিত মেহমান। ১৯৮৩ সালে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর আমন্ত্রনে ইরানের বিভিন্ন এলাকা সফর করে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে কোরআনের তাফসীর পেশ করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।
৫) আল্লামা সাঈদী ১৯৮৩ সালে তিনি মিশরের আল-আজহার ইউনিভাসির্টিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ডসহ আন্ত্রর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি। ওকলাহামা, ইউস্টন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। দণি গোলার্ধের অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে, উত্তর গোলার্ধের কানাডার টরেন্টো ও মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটিসহ পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশে তিনি মাহফিল করেছেন।
৬) পৃথিবীর প্রায় পঞ্চাশটি দেশে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার আহবানে ইসলামের দাওয়াতী কাজে ভ্রমন করেছেন।
৭) আগষ্ট’৯১-এ ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আল্লামা সাঈদীর আল্লামা খেতাব ও জুলাই ৯৩-এ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলন 'গ্র্যান্ড মার্শাল' পদক প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য।
৮) ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এল এম সি)। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিশাল মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অর্থ সংগ্রহে তিনি প্রত্য অবদান রাখেন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসির সাথে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও সেখানে আমন্ত্রিত হন।
৯) ১৯৯০ সলে মাওলানা সাঈদী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকিং সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
১০) সৌদি বাদশাহর মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালনকারী ব্যক্তি। আল্লামা সাঈদী সর্বপ্রথম হজ্জ্ব পালন করেন ১৯৭৩ সালে । এরপর তিনি ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে সৌদি বাদশাহ ফাহদ বিন আবদুর আজিজের রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালন করেন। রাবেতা আলম আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি পাঁচবার হজ্জ্ব পালন করেছেন।
১১) সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে নব্বই দশক থেকে বহু বছর কাবা শরীফে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফকারী।
১২) ১৯৯৩ সালে মাওলানা সাঈদী সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী ও দুবাই শাসকের আমন্ত্রণে দুবাই সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ‘‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন এওয়ার্ড’’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি বক্তৃতা করেন যা দুবাই টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। বিগত অক্টোবর ২০০৮ সালে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ঈদ গ্রাউন্ডে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন এ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজনে আল্লামা সাঈদীর বিশাল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আরব আমিরাতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শায়খ মোহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি ছিলো উল্লেখযোগ্য গণজমায়েত। উপস্থিত অর্ধলাধিক দর্শক- শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিলো 'পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞানময় মু'জিজা'। দুবাই সরকার তাঁর দুই ঘন্টার উক্ত বক্তব্য সিডি, ভিসিডি করে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। অনুরূপ মাহফিল হলো সাউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে। জেদ্দা, তায়েফ, দাম্মাম এবং পবিত্র মক্কা- মদীনায়।
একই ধরনের মাহফিল হলো গ্রীসের রাজধানী এথেন্স, নগরীর আলেকজান্দ্রা ষ্টেডিয়ামে, ইটালীর রাজধানী রোমে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে, জার্মানীর রাজধানী ফ্রাঙ্কফুটে, জাপানের রাজধানী টোকিওতে, কোরিয়ার রাজধানী সিউলে, অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, সিঙ্গাপুরে, ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং কুুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশে।
আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে অগণিত জনতার উপস্থিতির দৃশ্য সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। একই ধরনের মাহফিল হয়েছিলো আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সামনে ৪২ নং সড়কে এবং আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনসহ উক্ত দেশের ২২টি অঙ্গরাজ্যে। ইউরোপের ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনসহ গ্রেটবৃটেনের অনেক শহরে তিনি বহু বছর ধরে মাহফিল করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশে তিনি সফর করেছেন।
১৩) আল্লামা সাঈদী বহু গ্রন্থ প্রনেতা। আল্লামা সাঈদী ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ৬৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু গ্রন্থ ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়েছে।
১৪) আল্লামা সাঈদী ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে দুইহাজারের অধিক অমুসলিমকে মুসলিম বানানো এক মহা পুরুষ।
১৫) মওলানা সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা ইউসুফ সাঈদী দণিাঞ্চলের একজন শৈল্পিক বক্তা ও পীর। তিনি নিজ গ্রামে পিতার নির্মিত মাদ্রাসা হতে প্রাথমিক শিা গ্রহণ করেন এরপর তিনি শরসিনা আলিয়া ও খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ১৯৬২ সালে শর্সিনা আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ও তত্বের উপর অধ্যয়ন করেন। তিনি ভাষা, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞানের মত বিষয়গুলো প্রায় পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন।
১৬) আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তার এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের জন্য তিনি দোয়া করেন। ২০১০ সালে মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিবসহ বৃহত্তর বরিশালের ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্টের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে স্বারকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামছুল আলম তালুকদার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, সাবেক কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুনান, খসুল আলম, খন্দকার রেজাউল আলম শানু, অ্যাডভোকেট শেখ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান বাহাদুর, আবদুস সালাম হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, আবু তালেব সেপাই, ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবুল হোসেন তালুকদার, মোকাররম হোসেন কবীর, প্রকৌশলী মতিউর রহমান, অধ্যাপক ফরহাদ মুন্সি প্রমুখ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’
মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির, পিতা: এ,এম হাসান, গ্রাম-শংকরপাশা, থানা-জিয়ানগর, জেলা-পিরোজপুর সহ আরো অনেকে সাক্ষ্য দেন আল্লামা সাঈদী মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির “আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী: যুদ্ধাপরাধ নয়, জনপ্রিয়তাই যার অপরাধ” নামে একটি বইও লিখেছেন। এই বইটি ইংরেজীতেও অনুদিত হয়েছে। এই বইটি মাসুদ সাঈদীর তত্বাবধানে তৈরী এপ্লিকেশন - অষষধসধ ঝধুবফবব ধঃ ধ মষধহপব -এও দেওয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই মাস সাত দিন পর ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মাওলানা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সীরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী ও বিদেশে একটির পর একটি মাহফিলে আমন্ত্রিত হতে থাকেন। স্বাধীনতার পর কট্টর সেকুলার ও বামপন্থীদের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তিনি মরণপণ প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ নাগাদ পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মাহফিলে কোরআনের তাফসীর করেন। এই মাহফিলে তাকে লক্ষ্য করে বামপন্থীরা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। গুলিবর্ষণকালে এক মুহূর্তের জন্যও তার কথা বন্ধ হয়নি। এই বিপদসংকুল সময়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সালে জামায়াতের রোকন হন। জামায়াতে ইসলামীর এক চরম ক্রান্তিকালে আল্লামা সাঈদী জামায়াতে যোগ দেন এবং এর রোকনিয়াত গ্রহণ করেন। কাজেই যারা হুমকি ও প্রলোভন দিয়ে এই ইসলামী আন্দোলন থেকে তাঁকে বিচ্যুত করতে চায় চরম বোকা ছাড়া আর কিছু নয়। মহান আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে সবরে জামিল এক্তিয়ার করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
১৭) আল্লামা সাঈদী একজন জননন্দিত নেতা। ১৯৯৬ সালে তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা হতে জাতীয় সংসদের সদস্য নিবাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত তিন জন সদস্যর সংসদীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বলিষ্ঠ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সরকারের সকল দুষ্কর্মের সমুচিত জবাব দেন। ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নিবাচিত হন।
১৮) তিনি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সমাজসেবা, শিামূলক ইত্যাদি নানা কাজের সাথে যুক্ত। তিনি রাবেতা আলম আল ইসলাম এর উপদেষ্টা, ইসলমী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ-এর শরীয়াহ কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড চট্রগ্রাম-এর উপদেষ্টা, জামিয়া দ্বীনিয়া টঙ্গী, জামিয়া কাসেমিয়া নরসিংদী, দারুল কুরআন সিদ্দিকিয়া আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা দারুল হামান শিশু সদন, এস বি মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা পিরোজপুর এর চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দেশী ও বিদেশী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের আজীবন সদস্য।
১৯) আল্লামা বিভিন্ন েেত্র দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে আল্লামা সাঈদী বিশ্ববিস্তৃত ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০) ২০০৬ এর ৭ই অগাস্ট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার ৪৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, 'পৃথিবীর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলে। বাংলাভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দণি এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যিনি গত ৪০ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের কালের একজন বড় মাপের কুরআনের পন্ডিত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। শুধু বাংলাভাষা বা বাংলাদেশের কথাই বা বলি কেনো, আমাদের ইতিহাসে খুব কম মানব সন্তানই সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে অবস্থান করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। এদিক থেকে গোটা বিশ্ব পরিমন্ডলে আল্ল্ামা সাঈদী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মাঠে ময়দানে, পত্র পত্রিকায়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে, রেডিও টেলিভিশনে এক সুদীর্ঘকাল ধরে সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করার েেত্রও আল্লামা সাঈদীর বিকল্প কোনো ব্যক্তি আজকের মুসলিম বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ।' লন্ডনের সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখাটি আরো দীর্ঘ।
২১) সাঈদী বাংলাদেশের ইতিহাসে বিস্ময়কর জনপ্রিয় ব্যক্তি। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারীর কালো দিনে যখন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়া হয় তখন এর প্রতিবাদে বিােভে দুই দিনে বাংলাদেশের ২৩৪ জন নারী-পুরুষ-শিশু শাহাদাৎ বরণ করেছিল । আর অসংখ্য ব্যক্তি আহত হয়েছিল। মাত্র ২দিনের বিােভে এই বিশাল সংখ্যক শাহাদাত বাংলাদেশের ইতিহাসে নাই। মাত্র এক ব্যক্তির জন্য এত ব্যাপক প্রতিক্রিয়া বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এই ভালোবাসা অতুলনীয় । সাঈদীর পূত্র মাসুদ সাঈদীর একটি ইমেজ পোষ্ট এখানে দেওয়া হলো:
তোমরা কার উপর অবিচার-জুলুম করেছ? কাকে বলছ ধর্ষক, খুনি রাজাকার? আল্লাহ অবশ্যই আছেন - অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় তোমাদের দাঁড়াতে হবেই ইনশা-আল্লাহ। এর মধ্যে তোমাদের অনেকে কবরে চলে গেছে। এরপরও কি তোমরা তওবা করবে না? হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় অতি নিকটবর্তী। যদি তওবা না কর তোমরা নিকটবর্তী আগামী দিনের পৃথিবীর মানুষের কাছে তোমরা ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবে ইনশা-আল্লাহ।
সম্ভবমত সকল ব্যক্তি ও শক্তির সহায়তা নিয়ে আল্লামা সাঈদীর মুক্তির সংগ্রাম জোরদার করুন। আর সবাই দোয়া করি: হে আল্লাহ! হে রাহমানির রাহিম! হে কুন-ফায়াকুনের মালিক! হে সকল কল্যাণ-অকল্যানের মালিক! আল্লামা সাঈদীর মুক্তিদান করুন আর আল্লামা সাঈদীর মুক্তিকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের জন্য কল্যাণকর করে দিন, আমীন।