Thursday, September 15, 2011

মাওলানা সাঈদী এবং একটি অনুপ্রেরণা

মাওলানা সাঈদী এবং একটি অনুপ্রেরণা

ইব্‌ন হাসান 

অনেক দিন থেকে মাওলানা সাঈদী সাহেবকে নিয়ে কিছু লেখার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু মহৎ ব্যক্তিদের সম্পর্কে লিখতে হলে সময় নিয়ে লিখতে হয়। কিছু ব্যস্ততার কারণেও দেরি হয়ে গেল। একটা সত্য ঘটনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। এ রকম ঘটনা অনেকের জীবনেই হয়তো আছে। ঘটনাটি নিম্নরূপ। আলহামদুলিল্লাহ্‌, ২০০০ সনে DU তে ভর্তি হই এবং দেশের বাহিরে ভর্তির জন্যও চেষ্টা করতে থাকি। আমি বিদেশের একটা নামকরা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করব। কিন্তু ২ জন ইসলামিক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে recommendation লেটার লাগবে ২টি। আমি ছোটবেলা থেকেই একটু একটু ওয়াজ শুনতাম। মাওলানা সাঈদী সাহেব ও আমাদের এলাকায় সেসময় আসতেন। প্রচণ্ড আগ্রহ সহকারে কখনও মা এবং কখনও বন্ধুদের সহ ওয়াজ শুনতে যেতাম এবং তার ক্যাসেট থেকেও ওয়াজ শুনতাম। ২০০৩ সনে ঢাবি’র শামসুন্নাহার হলের মারামারির ঘটনা ঘটে, যা হয়ত অনেকেরই জানা আছে। যাই হোক, আমি মাওলানা সাঈদী সাহেবের নিকট থেকে recommendation লেটার নেওয়ার চিন্তা করলাম এবং উনার বড় ছেলের (মাওঃ রাফিক বিন সাঈদী) সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। আমার ধারণা ছিল যে, মাওলানা সাঈদী সাহেবের কাছ থেকে recommendation নিলে admission এবং scholarship দুটোই সহজ হবে। কেননা উক্ত university তে competition অনেক বেশি এবং প্রত্যেক দেশ থেকে কোটা অনুযায়ী ছাত্র নেওয়া হয়। মাওঃ রাফিক বিন সাঈদী আমাকে ঢাকাতে তাদের বাসায় গিয়ে একদিন পর লেটার টা নিয়ে আসতে বললেন। মাওলানা সাঈদী সাহেব তার ছেলের কাছ থেকে শুনে আমার জন্য recommendation লেটার এ সাইন করেন এবং সিল মেরে একটা খামে ভরে আমার কাছে উনার সেক্রেটারির মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলেন। আমি দেখে অবাক হলাম এই জন্য যে, উনি ৩ অথবা ৪ ধরনের সিল মেরে দিয়েছেন যেটাতে উনি scholarship জন্য strongly recommend ও করেছেন। আমার পরিবারের পক্ষে দেশের বাহিরে পড়ানোর ক্ষমতা নেই। ২টা রিকমেন্ডেশন লেটার লাগলেও আমি একটা দিয়েই অ্যাপ্লাই করলাম এই বিশ্বাসে যে, উনি তো বড় আলেম এবং বিদেশে উনার পরিচিতিও আছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমি বেশ কয়েক মাস পর university থেকে acceptance letter পেলাম। অক্টোবর ২০০৩ তে আমি দেশ ত্যাগের উদ্দেশে Airport এ গিয়া এক দেশি ভাইকে পেলাম এবং উনিও একই university তে যাইতেছেন জেনে খুশি হলাম। Immigration office পার হইতে গিয়ে সে ভাইজানকে কিছু ঘুষও দিতে হয়েছে। বিমানবন্দরের যা হয় যারা বাহিরে গিয়েছেন তারা খুব ভাল জানেন। আমি না হই এইখানে নাইবা বললাম। আমি অবশ্য ভালো অফিসারের কারণে কিছু না দিয়েই পার পেয়েছিলাম। ওই ভাই স্ট্যান্ড করা স্টুডেন্ট ছিলেন এবং DU এর ছাত্রও ছিলেন, তবও scholarship পায় নাই। পরে অবশ্য অনেক কষ্টের পর বছরখানিক চেষ্টার পরে scholarship পায়। আমি স্ট্যান্ড করি নাই তবুও আল্লাহর মেহেরবাণীতে university তে ভর্তির ৩/৪ দিন পর scholarship এর সুসংবাদ পেলাম। বেশ ক’জন বাংলাদেশী student থেকে মাত্র একজনকে সিলেক্ট করা হয়েছে। এই নিয়ামতের জন্য আমি আল্লাহর দরবারে অবনত মস্তকে শুকুর আদায় করি এবং অনুভব করি মাওলানা সাঈদী সাহেবের recommendation এর গুরুত্ব। অনার্স শেষ করা পর্যন্ত আমি scholarship পেয়েছি। আমি এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে মাওলানা সাঈদী শুধু দেশেই নয় বরং দেশের বাহিরেও সু’পরিচিত এবং আমার এই নিয়ামত এ কথাই প্রমাণ করে।

আমাদের university তে পৃথিবীর অনেক বড় বড় মুসলিম স্কলারগণ খুৎবাহ এবং বক্তব্য রেখে থাকেন। পবিত্র ক্বা’বা শরিফের সম্মানিত ইমাম থেকে নিয়ে আল আযহার university এর পৃথিবী খ্যাত ইমাম সাহেবদের বক্তব্যও শুনার সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। একটা বিষয় আমি পর্যবেক্ষণ করেছি, সেটা হল মুসলিম বিশ্বের মনীষীদের খুতবা এবং আলোচনা আমার কাছে প্রায়ই পরিচিত মনে হতো এবং লক্ষ্য করতাম যে, মাওলানা সাঈদী যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন এইসব বিশ্বখ্যাত মনীষীগণও সেসব বিষয়ের উপর আলোচনা রাখেন। আমার কাছে একটা বিষয় কিছুটা হলেও অবাক লাগে এই জন্য যে, মাওলানা সাঈদী বিশ্বের বড় কোন university তে লেখাপড়া না করেও কিভাবে সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা করেন যা বিখ্যাত ‘আলেমদেরই কথার প্রতিধ্বনি করে। আল-কুরআনের অনেক আয়াত মুখস্ত হয়েছে শুধু সাঈদী সাহেবের ওয়াজ শুনে।

আল-কুরআনের বেশ কিছু সুরাও মুখস্ত হয়েছে সাঈদী সাহেবের ওয়াজ শুনে এবং অনুপ্রাণীত হয়ে। জুম‘আর খুৎবা দেওয়াও কঠিন মনে হয়না। আথচ জীবনে কোনদিন মাদ্রাসাতে পড়ার সুযোগ হয় নাই। সবকিছুর জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলার দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি যিনি আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। এর পিছনে মাওলানা সাঈদীর মত আল্লাহর বান্দার দোয়া এবং অনুপ্রেরণা আছে বলে মনে হয়। আমি নিজেকে বড় করার জন্য এসব কথা বলছি না, শুধু সত্যকে তুলে ধরতে চেয়েছি। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে অহংকার মুক্ত থেকে ইবাদাত এবং তাঁর গোলামী করবার তোফিক দিন। আজ অনেক কষ্ট হয় এইজন্য যে, এ রকম নিরীহ লোককে বিনা বিচারে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় ক্ষমতার দাপটে। মু’মিনদের উপর এরকম অত্যাচার যুগ যুগ ধরে চলছে জালিম শাসকদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে যে, ইসলামী আন্দোলনের মহাপুরুষগণ কেউই জালিম শাসকদের হাত থেকে রক্ষা পায় নাই। আল্লাহ তায়ালা অনেক সময় ঈমানের পরীক্ষা নেন যাতে করে তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে আরও বেশি সম্মানিত করেন। ইয়া আল্লাহ, তুমি মাওলানা সাঈদীকে সম্মানের সাথে জেল থেকে বের করে দেশের মানুষকে তার সুমধুর কণ্ঠের ওয়াজ শুনবার তৌফিক দাও। আমীন। 

Source: http://www.sonarbangladesh.com


No comments:

Post a Comment