Wednesday, September 30, 2020

বিশ্বখ্যাত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী : বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী তাঁর অভিযাত্রা

 সংকলনে: শাহাদাতুর রহমান সোহেল

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (হাফেজাহুল্লাহ) বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তি, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনে সুপ্রসিদ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য তার ব্যাপক তৎপরতার আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে দেওয়া দুঃসাধ্য।  আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে একটি খন্ডচিত্র সমাহার এখানে দেওয়া হলো:

১) আল্লামা সাঈদী’র সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি প্রায় ৫০ বছর মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসীর পেশকারী। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য স্থানে তিনি তাফসীরুল কোরআন মাহফিল করেছেন। সেসব সিডি-ডিভিডি'র মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে । দল-মত নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর বাংলাভাষীদের মধ্যে তা ইসলামী জাগরণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সেসব থেকে কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও হয়েছে।

২) সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ কর্তৃক ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল আল্লামা সাঈদীকেও উক্ত কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। আর তিনি যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালান।  

৩) আল্লামা সাঈদী ইরাক- কুয়েত যুদ্ধের মীমাংসা বৈঠক আমন্ত্রিত মেহমান।

৪) আল্লামা সাঈদী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীর আমন্ত্রিত মেহমান।  ১৯৮৩ সালে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর আমন্ত্রনে ইরানের বিভিন্ন এলাকা সফর করে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে কোরআনের তাফসীর পেশ করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

৫) আল্লামা সাঈদী ১৯৮৩ সালে তিনি মিশরের আল-আজহার ইউনিভাসির্টিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ডসহ আন্ত্রর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি। ওকলাহামা, ইউস্টন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি  বক্তব্য রাখেন। দণি গোলার্ধের অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে, উত্তর গোলার্ধের কানাডার টরেন্টো ও মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটিসহ পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশে তিনি মাহফিল করেছেন।

৬) পৃথিবীর প্রায় পঞ্চাশটি দেশে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার আহবানে ইসলামের দাওয়াতী কাজে ভ্রমন করেছেন।

৭) আগষ্ট’৯১-এ ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আল্লামা সাঈদীর আল্লামা খেতাব ও জুলাই ৯৩-এ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলন 'গ্র্যান্ড মার্শাল' পদক প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য।

৮) ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এল এম সি)। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিশাল মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অর্থ সংগ্রহে তিনি প্রত্য অবদান রাখেন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসির সাথে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও সেখানে আমন্ত্রিত হন।

৯) ১৯৯০ সলে মাওলানা সাঈদী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকিং সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

১০) সৌদি বাদশাহর মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালনকারী ব্যক্তি। আল্লামা সাঈদী সর্বপ্রথম হজ্জ্ব পালন করেন ১৯৭৩ সালে । এরপর তিনি ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে সৌদি বাদশাহ ফাহদ বিন আবদুর আজিজের রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালন করেন। রাবেতা আলম আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি পাঁচবার হজ্জ্ব পালন করেছেন।

১১) সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে নব্বই দশক থেকে বহু বছর কাবা শরীফে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফকারী।

১২) ১৯৯৩ সালে মাওলানা সাঈদী সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী ও দুবাই শাসকের আমন্ত্রণে দুবাই সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ‘‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন এওয়ার্ড’’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি বক্তৃতা করেন যা দুবাই টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। বিগত অক্টোবর ২০০৮ সালে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ঈদ গ্রাউন্ডে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন এ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজনে আল্লামা সাঈদীর বিশাল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আরব আমিরাতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শায়খ মোহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি ছিলো উল্লেখযোগ্য গণজমায়েত। উপস্থিত অর্ধলাধিক দর্শক- শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিলো 'পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞানময় মু'জিজা'। দুবাই সরকার তাঁর দুই ঘন্টার উক্ত বক্তব্য সিডি, ভিসিডি করে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। অনুরূপ মাহফিল হলো সাউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে। জেদ্দা, তায়েফ, দাম্মাম এবং পবিত্র মক্কা- মদীনায়।

একই ধরনের মাহফিল হলো গ্রীসের রাজধানী এথেন্স, নগরীর আলেকজান্দ্রা ষ্টেডিয়ামে, ইটালীর রাজধানী রোমে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে, জার্মানীর রাজধানী ফ্রাঙ্কফুটে, জাপানের রাজধানী টোকিওতে, কোরিয়ার রাজধানী সিউলে, অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, সিঙ্গাপুরে, ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং কুুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশে।

আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে অগণিত জনতার উপস্থিতির দৃশ্য সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। একই ধরনের মাহফিল হয়েছিলো আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সামনে ৪২ নং সড়কে এবং আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনসহ উক্ত দেশের ২২টি অঙ্গরাজ্যে। ইউরোপের ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনসহ গ্রেটবৃটেনের অনেক শহরে তিনি বহু বছর ধরে মাহফিল করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশে তিনি সফর করেছেন।

১৩) আল্লামা সাঈদী বহু গ্রন্থ প্রনেতা। আল্লামা সাঈদী ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ৬৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু গ্রন্থ ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়েছে।

১৪) আল্লামা সাঈদী ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে দুইহাজারের অধিক অমুসলিমকে মুসলিম বানানো এক মহা পুরুষ।

১৫) মওলানা সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা ইউসুফ সাঈদী দণিাঞ্চলের একজন শৈল্পিক বক্তা ও পীর। তিনি নিজ গ্রামে পিতার নির্মিত মাদ্রাসা হতে প্রাথমিক শিা গ্রহণ করেন এরপর তিনি শরসিনা আলিয়া ও খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ১৯৬২ সালে শর্সিনা আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ও তত্বের উপর অধ্যয়ন করেন। তিনি ভাষা, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞানের মত বিষয়গুলো প্রায় পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন।

১৬) আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তার এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের জন্য তিনি দোয়া করেন। ২০১০ সালে মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিবসহ বৃহত্তর বরিশালের ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্টের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। 

স্মারকলিপিতে স্বারকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামছুল আলম তালুকদার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, সাবেক কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুনান, খসুল আলম, খন্দকার রেজাউল আলম শানু, অ্যাডভোকেট শেখ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান বাহাদুর, আবদুস সালাম হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, আবু তালেব সেপাই, ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবুল হোসেন তালুকদার, মোকাররম হোসেন কবীর, প্রকৌশলী মতিউর রহমান, অধ্যাপক ফরহাদ মুন্সি প্রমুখ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’

মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির, পিতা: এ,এম হাসান, গ্রাম-শংকরপাশা, থানা-জিয়ানগর, জেলা-পিরোজপুর সহ আরো অনেকে সাক্ষ্য দেন আল্লামা সাঈদী মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির “আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী: যুদ্ধাপরাধ নয়, জনপ্রিয়তাই যার অপরাধ” নামে একটি বইও লিখেছেন। এই বইটি ইংরেজীতেও অনুদিত হয়েছে। এই বইটি মাসুদ সাঈদীর তত্বাবধানে তৈরী এপ্লিকেশন - অষষধসধ ঝধুবফবব ধঃ ধ মষধহপব -এও দেওয়া হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই মাস সাত দিন পর ১৯৭২ সালের ২২  ফেব্রুয়ারী মাওলানা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সীরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী ও বিদেশে একটির পর একটি মাহফিলে আমন্ত্রিত হতে থাকেন। স্বাধীনতার পর কট্টর সেকুলার ও বামপন্থীদের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তিনি মরণপণ প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ নাগাদ পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মাহফিলে কোরআনের তাফসীর করেন। এই মাহফিলে তাকে লক্ষ্য করে বামপন্থীরা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। গুলিবর্ষণকালে এক মুহূর্তের জন্যও তার কথা বন্ধ হয়নি। এই বিপদসংকুল সময়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সালে জামায়াতের রোকন হন। জামায়াতে ইসলামীর এক চরম ক্রান্তিকালে আল্লামা সাঈদী জামায়াতে যোগ দেন এবং এর রোকনিয়াত গ্রহণ করেন। কাজেই যারা হুমকি ও প্রলোভন দিয়ে এই ইসলামী আন্দোলন থেকে তাঁকে বিচ্যুত করতে চায় চরম বোকা ছাড়া আর কিছু নয়। মহান আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে সবরে জামিল এক্তিয়ার করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

১৭) আল্লামা সাঈদী একজন জননন্দিত নেতা। ১৯৯৬ সালে তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা হতে জাতীয় সংসদের সদস্য নিবাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত তিন জন সদস্যর সংসদীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বলিষ্ঠ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সরকারের সকল দুষ্কর্মের সমুচিত জবাব দেন। ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নিবাচিত হন।

১৮) তিনি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সমাজসেবা, শিামূলক ইত্যাদি নানা কাজের সাথে যুক্ত। তিনি রাবেতা আলম আল ইসলাম এর উপদেষ্টা, ইসলমী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ-এর শরীয়াহ কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড চট্রগ্রাম-এর উপদেষ্টা, জামিয়া দ্বীনিয়া টঙ্গী, জামিয়া কাসেমিয়া নরসিংদী, দারুল কুরআন সিদ্দিকিয়া আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা দারুল হামান শিশু সদন, এস বি মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা পিরোজপুর এর চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দেশী ও বিদেশী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের আজীবন সদস্য।

১৯) আল্লামা বিভিন্ন েেত্র দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে আল্লামা সাঈদী বিশ্ববিস্তৃত ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০) ২০০৬ এর ৭ই অগাস্ট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার ৪৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, 'পৃথিবীর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলে। বাংলাভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দণি এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যিনি গত ৪০ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের কালের একজন বড় মাপের কুরআনের পন্ডিত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। শুধু বাংলাভাষা বা বাংলাদেশের কথাই বা বলি কেনো, আমাদের ইতিহাসে খুব কম মানব সন্তানই সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে অবস্থান করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। এদিক থেকে গোটা বিশ্ব পরিমন্ডলে আল্ল্ামা সাঈদী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মাঠে ময়দানে, পত্র পত্রিকায়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে, রেডিও টেলিভিশনে এক সুদীর্ঘকাল ধরে সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করার েেত্রও আল্লামা সাঈদীর বিকল্প কোনো ব্যক্তি আজকের মুসলিম বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ।' লন্ডনের সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখাটি আরো দীর্ঘ।

২১) সাঈদী বাংলাদেশের ইতিহাসে বিস্ময়কর জনপ্রিয় ব্যক্তি।  ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারীর কালো দিনে  যখন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়া হয় তখন এর প্রতিবাদে বিােভে দুই দিনে বাংলাদেশের ২৩৪ জন নারী-পুরুষ-শিশু শাহাদাৎ বরণ করেছিল ।  আর অসংখ্য ব্যক্তি আহত হয়েছিল। মাত্র ২দিনের বিােভে এই বিশাল সংখ্যক শাহাদাত বাংলাদেশের ইতিহাসে নাই। মাত্র এক ব্যক্তির জন্য এত ব্যাপক প্রতিক্রিয়া বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এই ভালোবাসা অতুলনীয় । সাঈদীর পূত্র মাসুদ সাঈদীর একটি ইমেজ পোষ্ট এখানে দেওয়া  হলো:

তোমরা কার উপর অবিচার-জুলুম করেছ? কাকে বলছ ধর্ষক, খুনি রাজাকার?   আল্লাহ অবশ্যই আছেন - অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় তোমাদের দাঁড়াতে হবেই ইনশা-আল্লাহ। এর মধ্যে তোমাদের অনেকে কবরে চলে গেছে। এরপরও কি তোমরা তওবা করবে না? হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় অতি নিকটবর্তী। যদি তওবা না কর তোমরা নিকটবর্তী আগামী দিনের পৃথিবীর মানুষের কাছে তোমরা ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবে ইনশা-আল্লাহ।

সম্ভবমত সকল ব্যক্তি ও শক্তির সহায়তা নিয়ে আল্লামা সাঈদীর মুক্তির সংগ্রাম জোরদার করুন। আর সবাই দোয়া করি: হে আল্লাহ! হে রাহমানির রাহিম! হে কুন-ফায়াকুনের মালিক! হে সকল কল্যাণ-অকল্যানের মালিক! আল্লামা সাঈদীর মুক্তিদান করুন আর আল্লামা সাঈদীর মুক্তিকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের জন্য কল্যাণকর করে দিন, আমীন।



Monday, September 14, 2020

Allama Sayedee at a glance: আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে জানার অসাধারণ এপ্লিকেশন By মাসুদ সাঈদী

 


মাসুদ সাঈদীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে জানার অসাধারণ এপ্লিকেশনটি ডাউনরোড করুন নীচের লিংক থেকে: 

Allama Sayedee at a glance


বিগেনারদের জন্য গাইড: - ওপরে Allama Sayedee at a glance -এ ক্লিক করলে গুগুল ড্রাইভের উক্ত ফোল্ডার ওপেন হবে। সেখানে ডানে ওপরে বাটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন। জীপ হিসাবে ডাউনলোড হবে। আনজিপ করে দেখুন। প্রায় দেড় জিবি ফোল্ডারটিই উক্ত ফোল্ডার। উইন্ডোজ ১০-এ ঠিকমত ওপেন না-ও হতে পারে। উইন্ডোজ-এর আগের ভার্সনগুলোতে দেখুন। উইন্ডোজ ১০-এ ফাইলটি ওপেন হতে সমস্যা হলে Data ফোল্ডারে যেয়ে কিছু দেখতে পারেন। 

Friday, September 11, 2020

অন্য ওয়েব সোর্সে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে বিবিধ বিষয়ে লিংকসমূহ


অন্য ওয়েব সোর্সে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে বিবিধ বিষয়ে লিংকসমূহ নীচে দেওয়া হলো: 


১ : আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ভবিষ্যদ্বাণী: আমাদের করণীয় কি?





৫ : কি ঘটেছিল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সেই কালো দিনে ? আল্লামা সাঈদীর রায় ঘিরে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ







১১ :  বিভিন্ন ইসলামী কাজ সম্পর্কে আমাদের কি করণীয়? -আল্লামা সাঈদীর গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ



১৩ : কাদের ষড়যন্ত্রে ১০টি বছর কষ্টে আছেন আল্লামা সাঈদী | Elias Hossain



১৫ : বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সম্পর্কে বর্তমান যুগের হকপন্থী আলেমদের মতামত


১৬ : আল্লামা সাঈদী কি আসলেই যুদ্ধাপরাধী ছিলেন? । প্রমাণসহ দেখুন । আল্লামা সাঈদী


১৭ : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী - বিস্ময়কর ইতিবৃত্ত


১৮ : আওয়ামীলীগ নয় বরং জামায়াতে ইসলামীরাই প্রকৃত দেশ প্রেমিক – রাকেশ রহমান




Friday, March 20, 2020

সাঈদীকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সব শীর্ষ উলামায়ে কেরামের বিবৃতি


মানবিক, ধর্মীয় ও বয়স বিবেচনায় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম। গতকাল বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা আহ্বান জানান।


বিবৃতিতে শীর্ষ উলামাগণ বলেন, বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নানান জটিল ও কঠিন রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন। যেকোন সময়ে তার এই মরণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা করছি আমরা। দেশ জাতির এ কঠিন মুহূর্তে তার প্রতি সদয় হওয়া সময়ের দাবী। তাই আমরা রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানের কাছে আল্লামা সাঈদীর আশু মুক্তি দাবী করছি।

তারা বলেন, ক্ষমতা কোনো দিন চিরস্থায়ী নয়। সামান্য একটি ভাইরাস দিয়ে আল্লাহ তায়ালা গোটা দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। দুনিয়ার বড় শক্তিগুলোকে মানবিক হতে শিখিয়েছে। সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের ফরিয়াদ বর্ষীয়ান এ মুফাসসিরে কোরআনকে মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আমাদের সরকার ও রাষ্ট্র বর্ষীয়ান এ মুফাসসিরের প্রতি সদয় হয়ে তাকে মুক্তি দিন। মহান আল্লাহ তার গজব ‘করোনা ভাইরাস’ থেকে দেশ, জাতি ও উম্মাহকে রক্ষা করুন। 

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হজুর, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, সমমনা ইসলামী দলসমূহের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব শর্ষীনার ছোট পীর মাওঃ শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাওঃ আঃ মোমেন নাছেরী,টেকের হাটের পীর সাহেব মাওঃ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মুফতি মাওলনা আবদুর রহমান চৌধুরী, নেজামে ইসলামীর মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, মাওঃ হাফেজ আবুল হোসাইন, মুফতি মাওঃ নাসির উদ্দীন খান, হক্কানী ত্বরীকত মিশনের আমির আধ্যাত্মিক গুরু শাইখ নুরুল হুদা ফয়েজী, হক্কানী ত্বরীকত মিশনের জেনারেল সেক্রেটারী আল্লামা মুস্তাক ফয়েজী, ইসলামী ঐক্য মঞ্চ সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ আশরাফী, বেফাকের কেন্দ্রিয় উস্তাদ মুফতি বাহউদ্দীন, মুসলিম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শায়েখ মাওলানা রহমান আজিজ হবিগঞ্জী, খতিব পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা সালেহ, মুফাসসির পরিষদের কেন্দ্রিয় নেতা মাওলানা জাকির হোসাইন, হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের সহ সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী,গণসভা আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা বনী ইয়ামিন,কাসেমী পরিষদের আমীর শায়খ আবু বকর কাসেমী প্রমুখ।

Thursday, September 3, 2015

আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কি অপরাধী ছিলেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং আল্লামা সাঈদী

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং আল্লামা সাঈদী
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যখন স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আল্লামা সাঈদী যশোরের নিউমার্কেট এলাকার ‘এ’ ব্লকে সপরিবারে বসবাস করতেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি যে বাসায় বসবাস করতেন তার আশপাশে পাক সেনাদের বোমা এসে পড়তে থাকায় তিনি সপরিবারে বাঘারপাড়া নামক এলাকায় চলে যান। বাঘারপাড়া ও মহিরন এলাকা মিলে আল্লামা সাঈদী সেখানে প্রায় চার মাস সপরিবারে অবস্থান করেন। এরপর যুদ্ধের ভয়াবহতা কিছুটা কমে এলে আল্লামা সাঈদী যশোর থেকে পিরোজপুরের নিজ গ্রাম সাঈদখালীতে জুলাই ’৭১ সালের মাঝামাঝি ফিরে যান।
স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁর সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষে যেসব দল গঠিত হয়েছিল, যেমন রাজাকার, আল বদর, আল শামস, মুজাহিদ বাহিনী, শান্তি কমিটি এসবের কোনো কিছুতেই তিনি জড়িত ছিলেন না। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধাগণও এসবের সাক্ষী।
স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ তথা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তিনি সর্বপ্রথম নিজ এলাকা পিরোজপুর থেকেই পবিত্র কুরআনের তাফসির মাহফিল শুরু করেন। এরপর ক্রমশ বাংলাদেশের প্রত্যেক থানা ও জেলায় মাহফিল করেন। পরবর্তীতে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কুরআন তাফসির মাহফিল করতে থাকেন। তাঁর মাহফিলে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান, প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, মন্ত্রী, এমপি, দেশের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, আইনজীবী, সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ যোগ দিয়ে কুরআনের তাফসির শুনতেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এর মাত্র দু’মাস পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আল্লামা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সিরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী একটির পর একটি মাহফিলে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হতে থাকেন। এ দেশের মানুষের মুখে মুখে শ্রদ্ধাজড়িত কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে একটি নাম, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।’
বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা বা উল্লেখযোগ্য থানা নেই যেখানে তিনি তাফসির মাহফিল করেননি, তাঁর প্রায় প্রত্যেকটি মাহফিলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছেন, বহু সংখ্যক মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণও বক্তব্য রেখেছেন। বিদেশের স্কলারগণ মাহফিলে এসে বক্তব্য রেখেছেন, এমনকি পবিত্র কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম চট্টগ্রামে তাঁর তাফসির মাহফিলে দুইবার তাশরিফ এনেছেন।
১৯৭৯ সালে নারায়ণগঞ্জ চিলড্রেন পার্কে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী তাফসির মাহফিলের উদ্বোধনী দিবসে স্বাধীনতার মহান ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আল্লামা সাঈদী সাহেবের পাশে বসে ঘণ্টাকাল তাঁর তাফসির শুনেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আজও তার সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল এবং সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ ছিলেন আল্লামা সাঈদী সাহেবের অন্তরঙ্গ বন্ধু, তারা একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ইসলামের দুশমন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছরের মধ্যে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেনি। তিনি যখনই জাতিকে কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানালেন এবং নিজে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন, তখন থেকেই ইসলামের শত্রুরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললো, তিনি নাকি স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকার সকল ধর্মের সাধারণ মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি রাজাকার, আল বদর, আল শামস ছিলেন না এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি সামান্যতম ভূমিকাও পালন করেননি।
আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার : মুক্তিযোদ্ধাদের মন্তব্য
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যখনই রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা শুরু করলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো তিনি নাকি স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকার সকল ধর্মের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি রাজাকার, আল বদর, আল-শাসসের সদস্য ছিলেন না।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাক্ষী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’
পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নুরুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘৭১ সালে আমি সুন্দরবনে মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। আমরাই পিরোজপুর শত্রুমুক্ত করেছি। ’৭১ সালে পাড়েরহাট-জিয়ানগরের সব রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের ধরে নিয়ে সুন্দরবনে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদী যদি রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে তার জীবিত থাকার কথা নয়।’
যুদ্ধকালীন ইয়ং অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এমডি লিয়াকত আলী শেখ বাদশাহ বলেন, আল্লামা সাঈদী রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকাতেও তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আল্লামা সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড করেছেন বলে আমি শুনিনি, দেখিওনি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাহাদুর বলেন, ‘আল্লামা সাঈদীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বাম ঘরানার নেতারা এবং পিরোজপুরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে নাটক প্রচার করেছে তা গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধ মামলা সাজানো এবং ষড়যন্ত্রমূলক তা জনগণের সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
এভাবে মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক কমান্ডার গৌতম রায় চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুনান, পিরোজপুর পৌরসভার কমিশনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন, মুক্তিযুদ্ধে পাড়েরহাটের ক্যাম্প কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: খসরুল আলম, নাজিরপুরের যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ইয়ং কমান্ডার খন্দকার রেজাউল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: সালাম তালুকদারসহ পিরোজপুরের স্বনামধন্য প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আল্লামা সাঈদীর সামান্যতমও বিতর্কিত ভূমিকা ছিলো না।
(তথ্যসূত্র : যুদ্ধাপরাধ নয় জনপ্রিয়তাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ। লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন কবির, মুক্তিযোদ্ধা নং ম ১৬৩৯)
পার্লামেন্টে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ও চ্যালেঞ্জ
১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কেউই কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন ওঠেনি। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে যখন আল্লামা সাঈদীকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মনোনীত করার সংবাদ জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়, মূলত তখন থেকেই একটি মহল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে যে, তিনি স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ছিলেন। পরপর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রচার করা হচ্ছে যে, তিনি যুদ্ধাপরাধীও ছিলেন। এসব কিছুই যে তাঁর বিরুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিম চেতনাবিরোধী শক্তির নীলনকশা অনুযায়ী ঘটছে এ বিষয়টি সচেতন জনগোষ্ঠীর নিকট দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
আল্লামা সাঈদী ১৯৯৭ সালের ২৪ জুন পার্লামেন্টে বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে ড. কুদরতে খুদা প্রণীত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনা করছিলেন, তখন পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চোধুরী। সেদিন পার্লামেন্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় সকল সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আল্লামা সাঈদীর বক্তৃতা চলাকালীন সময়ে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে একজন আওয়ামী সংসদ সদস্য বলে উঠে ‘রাজাকার’। সাথে সাথে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আমাকে রাজাকার বলা হয়েছে। বাংলাদেশের এমন কোনো বাবার সন্তান নেই যে, আমাকে রাজাকার বলতে পারে। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না। আমি রাজাকার নই, আমাকে রাজাকার বলে যদি তা কেউ প্রমাণ করতে না পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমি দশ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করবো। যারা ভারতীয় রাজাকার তারাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে।’
(তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিতর্ক পুস্তকের ১৫০-১৫৫ পৃষ্ঠা)

রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার আল্লামা সাঈদী
এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, যে মানুষটি সারাটি জীবন সমগ্র পৃথিবীব্যাপী কুরআনের তাফসির পেশ করেছেন, নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা, উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সাদাসিধে জীবন-যাপনের জন্য দেশবাসী যাঁকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা
করে সেই আল্লামা সাঈদীকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তাঁর বিশ্ব্যাপী জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে যুদ্ধাপরাধের কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার বিভাগের ইতিহাসে কালিমা লেপন করে একজন নিরপরাধ মানুষকে ক্ষমতার জোরে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সরকার।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যখন থেকেই অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, শোষণ, হত্যা-ধর্ষণ, বোমাবাজি-সন্ত্রাস, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, সাম্প্রদায়িকা তথা সকল প্রকার অনিয়নের বিরুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে সমগ্র পৃথিবীতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইনসাফের বাণী উচ্চকিত করেছেন, তখনই তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। যারা তাঁকে কাছে থেকে দেখেছেন তারা এটাকে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
‘যদি কেউ একজন মানুষকে হত্যা করে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো, যদি কেউ একজন মানুষের জীবন বাঁচায় সে যেনো সমগ্র মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল’ পবিত্র কুরআনের এ মহান বাণী যে মানুষটি বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রচার করে আসছেন এবং এ আদর্শে মানবজাতিকে দীক্ষিত করার লক্ষ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন, সেই মানুষটির বিরুদ্ধে ’৭১ সালে মানুষ হত্যা করার মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত এ সরকার আল্লামা সাঈদীকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে মনে করছে এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার : কেন হঠাৎ এ আয়োজন ?
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও দু’বার ক্ষমতায় এসেছিল। প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭২ সালে আর দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে। এ দু’ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তারা কখনো আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো অভিযোগ তোলেনি। এমনকি তখন তারা আল্লামা সাঈদীর দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এমন একজন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে তার জন্মের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৪০ সাল থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো থানায় মামলা তো দূরের কথা সামান্য একটি জিডি পর্যন্ত হয়নি। তাহলে ৪০ বছর পরে কেন হঠাৎ সরকার আল্লামা সাঈদীর মতো ব্যক্তির ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে সাজানো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে!
ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ গঁংষরস সরহড়ৎরঃু অভভধরৎং, মার্চ ২০১১ সংখ্যার একটি আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয় যে, ‘বাংলাদেশ জনসংখ্যায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম ইসলাম সেখানে দিনে দিনে মাইনরিটি হয়ে যাচ্ছে। যেখানে পাশ্চাত্যে মুসলিম মাইনরিটি হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের মৌলিক ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে সেখানে বাংলাদেশে মুসলিমদের এ মৌলিক অধিকারটি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। বাংলদেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সে দেশের সরকার অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সমাজ ও রাজনীতিক অঙ্গন থেকে ইসলামী প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে এবং সেকুলারিজম বাস্তবায়নের জন্য কিছু সমন্বিত পলিসি গ্রহণ করছে। মুসলিমদের মৌলিক ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা ছাড়াও কিছু আক্রমণাত্মক ও সহিংস নীতি গ্রহণ করেছে, যেগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক মূলনীতি, আইনের শাসন, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের বিরোধী।’
‘এর পাশাপাশি সরকার ইসলাম ও ইসলামের প্রতীকগুলোকে তাদের জন্য রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছে। সমাজ ও রাজনীতি থেকে ইসলামী প্রভাব কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে ইসলামী ব্যক্তিদের চরিত্র হনন ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য তাদের ওপর মানহানিকর অভিযোগ আনা হচ্ছে। আল্লামা সাঈদীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তকরণ এই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।’
এ বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নজিরবিহীন জনপ্রিয়তাকে সরকার তার রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ঐড়ষরফধু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয় যে, ‘এ যাবৎ সরকারের আচরণ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটাই মনে করছে যে, এ বিচার হচ্ছে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য। যদি এ বহু বিতর্কিত বিচারটি ন্যায়সঙ্গতভাবে করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি অন্ধকার অধ্যায়ের সম্মুখীন হবে যা গৃহযুদ্ধে রূপ নিতে পারে।’
এ ছাড়াও ২০১১ সালে মানবাধিকার রিপোর্ট : বাংলাদেশ (টঝ স্টেট ডিপার্টমেন্ট)-এ উল্লেখ করা হয় যে, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, সহিংসতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতন ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ : অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক দল ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩’ যে একটি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার তা তারা তাদের বক্তব্য/বিবৃতি দিয়ে বারবার জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং এ অ্যাক্ট যে শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতকে দমন করার জন্যই করা হয়েছে তাও পরিষ্কার করে বারবার বলা হয়েছে। একই সাথে ১৯৭৩ সালের যে অ্যাক্টের অধীনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও বারবার আপত্তি জানানো হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে। অ্যামনেস্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই বিরোধী দলের নেতা। এতে মনে হচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল শুধু বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজনদেরই বিচার করছে। (সূত্র : আমার দেশ, ১২.৭.২০১১)
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে বিদ্যমান আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে না। আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে নিরপেক্ষ বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন এবং বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের এ আইনটিকে সংশোধন করতে হবে। ব্রাড এডামস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য ৭টি সুপারিশ পেশ করে বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বরাবর মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। (সূত্র : আমার দেশ, ২০.৫.২০১১)

বাংলাদেশ সফর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে মার্কিন সহায়তা পেতে হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে। (সূত্র : প্রথম আলো, ১৭.৯.২০১১)
আন্তর্জাতিক আইনজীবী এবং যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। যে আইনে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। (সূত্র : আমার দেশ, ৮.৫.২০১১)
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডার বিচারপতি টি এইচ খান বলেছেন, যেভাবেই হোক সাজা দেবো, এ উদ্দেশ্যেই যুদ্ধাপরাধ বিচারের আয়োজন চলছে। (সূত্র : যুগান্তর, ২১.৬.২০১২)
যুদ্ধাপরাধের বিচার বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে!
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানি) নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে গঠিত তথাকথিত গণ-আদালতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই বর্তমানের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঘাদনি নেতা শাহরিয়ার কবীর সম্পাদিত ‘একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ শিরোনামে লেখা বইয়ের ১০৩ ও ১০৪ পৃষ্ঠায় গণ-আদালতের বিচারের জন্য গঠিত ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের’ সদস্যদের নাম রয়েছে। গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সমন্বয়কারী ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, সেক্রেটারিয়েট সদস্য হিসেবে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো: খলিলুর রহমানের (এম. কে রহমান) নাম রয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক আইন, নীতিমালা ও বিধান অনুযায়ী কোন বিচারের সাথে আগেই যাদের কোনো দূরতম সম্পর্ক থাকে তারা কোনদিন সেই একই বিচারের ক্ষেত্রে বিচারক হতে পারে না। অভিযোগকারী কখনও বিচারকের আসনে বসতে পারে না।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সাথে নিয়মিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতেন সরকার দলীয় মন্ত্রীসহ দলের কয়েকজন নেতা (সূত্র : নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ সংলাপ)। এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল। সুতরাং এ বিচার কখনও ন্যায়বিচার হতে পারে না।

Tuesday, September 20, 2011

অবিলম্বে মাওলানা সাঈদীকে মুক্তি দিন -জমিয়াতুল মুফাসসিরিন

অবিলম্বে মাওলানা সাঈদীকে মুক্তি দিন -জমিয়াতুল মুফাসসিরিন
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছেন জমিয়াতুল মুফাসসিরিন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠক সংগঠনের সভাপতি মাওলানা কে এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল ও ছারছিনার পীর মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ ছিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আলাউদ্দীন খান, মাওলানা আব্দুস সাত্তার আজাদী, মাওলানা মাসুদুজ্জামান, মাওলানা আব্দুর রউফ বিক্রমপুরী, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হালিম, মাওলানা মারুফ বিল্লাহ, মাওলানা খন্দকার শহিদুল হক, মাওলানা সালাউদ্দীন, মাওলানা গোলাম রাববী প্রমুখ।
বৈঠকে মাওলানা সাঈদীর অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। সভায় বলা হয়, সরকার সাঈদীকে কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে যা রীতিমতো হাস্যকর। 
পরবর্তীতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক দেখানো হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আসল কথা হচ্ছে, যুদ্ধপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়, জনপ্রিয়তাই মাওলানা সাঈদীর কাল হয়েছে।

বৈঠকে মাওলানা সাঈদীর আশুমুক্তির জন্য আগামী ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নফল রোজা পালন, রাতে তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াত ও কুনুতে নাযিলা পড়াসহ মহান আল্লাহ রববুল আলামীনের দরবারে বিশেষ দোয়া, মোনাজাতের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মসজিদের ইমাম, খতিব, পীর, ওলামা-মাশায়েখ, সাঈদী সাহেবের ভক্তবৃন্দসহ দেশ-বিদেশের সকল ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ সকলের প্রতি এ কর্মসূচি পালনের আহবান জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Monday, September 19, 2011

সাঈদীর মুক্তি দাবি : প্রধানমন্ত্রীকে ৫১ মুক্তিযোদ্ধার স্মারকলিপি

সাঈদীর মুক্তি দাবি : প্রধানমন্ত্রীকে ৫১ মুক্তিযোদ্ধার স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার: জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিবসহ বৃহত্তর বরিশালের ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গতকাল বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্টের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে সব মামলা প্রত্যাহার করে মাওলানা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মাওলানা সাঈদীর কোনো বিতর্কিত ভূমিকা ছিল না। দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা আমাদের প্রাণের দাবি; কিন্তু এ বিচারের নামে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন দণ্ডিত না হন, কেউ যেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হন। তারা আরও বলেন, মাওলানা সাঈদীর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমকে যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিতান্তই হাস্যকর, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, কারা স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে ছিলেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল লেখা থাকবে এবং এ ইতিহাস কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। তারা বলেন, তদানীন্তন পিরোজপুর মহকুমাসহ বৃহত্তর বরিশালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে চান, মহান মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা সাঈদীর বিতর্কিত কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ১৯৭১ সালে প্রণীত এ সম্পর্কিত কোনো তালিকাতেও তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস মাওলানা সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরে আমাদের চোখের সামনেই ছিলেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারও জানার কথা নয়। মাওলানা সাঈদী মুক্তিযুদ্ধে সামান্য বিতর্কিত ভূমিকাও পালন করেননি উল্লেখ করে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সরকারি দলিলপত্রও তার নির্দোষ প্রমাণ করে।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন—পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামছুল আলম তালুকদার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, সাবেক কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুনান, খসুল আলম, খন্দকার রেজাউল আলম শানু, অ্যাডভোকেট শেখ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান বাহাদুর, আবদুস সালাম হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, আবু তালেব সেপাই, ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবুল হোসেন তালুকদার, মোকাররম হোসেন কবীর, প্রকৌশলী মতিউর রহমান, অধ্যাপক ফরহাদ মুন্সি প্রমুখ।

 Source: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/29/51150